ট্রাম্পের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান, আরবদের ঐক্যবদ্ধ করছে মিসর :: ট্রাম্পের বিরোধিতা জার্মান চ্যান্সেলরের :: আরো তিন জিম্মিকে মুক্তি দিলো হামাস

ফিলিস্তিনিরাই গাজাকে পুনর্নির্মাণ করবে

Daily Inqilab ইনকিলাব ডেস্ক

০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:০৩ এএম | আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৩৮ এএম

যুদ্ধ বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনিরা জানিয়েছে, তারা নিজেরাই নিজেদের উপকূলীয় পর্যটনশিল্প তথা হোটেল ও রেস্টুরেন্ট গড়ে তুলতে পারবে এবং গাজা পুনর্নির্মাণ করতে তারা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। একই সঙ্গে তারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সেই পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছেন, যেখানে তিনি গাজাকে জনশূন্য করে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা বা বিলাশবহুল নগরী’ বানানোর কথা বলেছেন।

দীর্ঘ ১৫ মাস ধরে চালানো ইসরাইলি আগ্রাসনে গাজার ভবনগুলো এখন ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিনের অবরোধের মধ্যেও গাজাবাসী একটা সময় নিজস্ব স্থানীয় পর্যটন শিল্প গড়ে তুলেছিল। এ নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে আসাদ আবু হাসেইরা নামে গাজার এক বাসিন্দা বলেন, ‘কোনো কিছুই পুনর্নির্মাণ করা অসম্ভব নয়’। সেই সঙ্গে পুনর্নির্মাণের আগেই তিনি তার রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার পরিবেশন শুরু করবেন বলেও ঘোষণা দেন। গাজার এই বাসিন্দা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘ট্রাম্প বলছেন, তিনি গাজার রেস্টুরেন্ট বদলাতে চান, গাজাকে বদলাতে চান এবং গাজার জন্য নতুন ইতিহাস তৈরি করতে চান। কিন্তু আমরা আরবই থেকে যাব এবং আরবদের ইতিহাস কখনোই বিদেশিদের ইতিহাস দ্বারা প্রতিস্থাপিত হবে না’। একই সঙ্গে, তার রেস্টুরেন্টটি ‘আগের চেয়েও ভালো অবস্থায়’ ফিরে আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ সময় তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘ট্রাম্প সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তিনি এখানে বিলাশবহুল হোটেল-রেস্টুরেন্ট প্রতিষ্ঠা করতে চান। কিন্তু রেস্টুরেন্ট তো এখানে ছিলই, হোটেলও ছিল! তাহলে এগুলো ধ্বংস করার দরকার কী ছিল? আর এখন নতুন করে তৈরি করার দরকার হচ্ছে কেন?’

গোটা গাজা উপত্যকা একটা সময় ইসরাইলি পর্যটকদের জন্য ছিল এক জনপ্রিয় গন্তব্য, পর্যটনের জায়গা। ২০০৭ সালে হামাস গাজার শাসনভার গ্রহণের পরও উপত্যকাজুড়ে রেস্টুরেন্ট ও ক্যাফেগুলো ছিল বেশ জমজমাট। কিন্তু দখলদার ইসরাইলের যেন তা সহ্য হলো না। অত্যাচার-নির্যাতনের ধারাবাহিকতায় এক পর্যায়ে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর আগ্রাসন বাড়িয়ে দিল। যার প্রতিবাদ হিসেবে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের বিরুদ্ধে এক ঝটিকা অভিযান চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপর থেকেই গত ১৫ মাস ধরে চালানাও লাগাতার হামলায় ৬২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করাসহ গোটা গাজা উপত্যকাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করল বর্বর ইসরাইল। আর এখন তাদের ইন্ধনদাতা আমেরিকা চাচ্ছে জীবিত ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করে গাজা উপত্যকা দখলে নিতে এবং নিজের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে।

আরবদের ঐক্যবদ্ধ করছে মিশর : শুক্রবার মিশর জানিয়েছে যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা খালি করার কথা বলার পর, ফিলিস্তিনিদের যেকোনো স্থানচ্যুতির বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রতিবাদ করার জন্য তারা জর্ডান, সউদী আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত সহ আরব অংশীদারদের সাথে যোগাযোগ করছে। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রী বদর আবদেলাত্তি ১১টি দেশের সমকক্ষের সাথে যোগাযোগ করছেন। তারা ‘ফিলিস্তিনিদের ভূমি থেকে বাস্তুচ্যুত করার লক্ষ্যে যেকোনো পদক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করে, অথবা ফিলিস্তিনি ভূখ-ের বাইরে অন্য দেশে তাদের স্থানান্তরের বিরোধিতা করে’ ‘ফিলিস্তিনি স্বার্থে আরবদের অবস্থানের স্থিরতা’র বিষয়ে জোর দিয়েছেন।

ট্রাম্প পরামর্শ দিয়েছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের কাছ থেকে গাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মিশর ও জর্ডান সহ অন্যত্র ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসনের পর ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’ তৈরি করবে। কিন্তু আরব দেশগুলো ইসরাইলের পাশাপাশি একটি পৃথক ফিলিস্তিনি আবাসভূমি সহ একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান দেখতে চায়। মিশরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তর ‘আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন, ফিলিস্তিনি অধিকারের লঙ্ঘন, এ অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি এবং এর জনগণের মধ্যে শান্তি ও সহাবস্থানের সুযোগকে ক্ষুণœ করার’ প্রতীক হবে।

মিশরের নিরাপত্তা সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে যে, কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে তা নিয়ে মতবিরোধ থাকা সত্ত্বেও ট্রাম্পের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করার জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট, সামরিক বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থা ঐক্যবদ্ধ ছিল। প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি বলেছেন যে, ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসনের বিরোধিতা করার জন্য মিশরীয়রা রাস্তায় নামবে। মিশর এই অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র এবং কাতার ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে গাজা যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছে।

ট্রাম্পের বিরোধিতা জার্মান চ্যান্সেলরের : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিকল্পনা অনুযায়ী গাজা উপত্যকা থেকে ফিলিস্তিনিদের এই অঞ্চলের অন্য দেশে স্থানান্তর করতে কেউ পারবে না, জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ শুক্রবার বলেছেন। ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যা প্রস্তাব করেছেন তা আমি সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করছি। আমাদের গাজার জনগণকে মিশর ও জর্ডানে স্থানান্তর করা উচিত নয়,’ শলৎজ ফেডারেল রাজ্য বাডেন-উয়ের্টেমবার্গের লুডভিগসবার্গে এক প্রচারণা অনুষ্ঠানে বলেন। চ্যান্সেলর মধ্যপ্রাচ্যে আরও উত্তেজনা রোধ এবং ভবিষ্যতের ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র ও ইসরাইলের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।

৪ ফেব্রুয়ারি, হোয়াইট হাউসে আলোচনার পর ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সাথে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন যে, মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির স্বার্থে গাজা উপত্যকাকে উন্নত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘমেয়াদী প্রশাসনের কথা বিবেচনা করছে। এছাড়াও, তিনি ছিটমহল থেকে ফিলিস্তিনিদের এই অঞ্চলের অন্যান্য দেশে পুনর্বাসনের প্রস্তাব করেছিলেন, যার জন্য তিনি বলেছিলেন যে, এর জন্য অর্থ প্রদান করতে হবে। ট্রাম্প আরও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, প্রয়োজনে গাজায় যুক্তরাষ্ট্র সেনা পাঠাতেও প্রস্তুত রয়েছে।

আরও তিন জিম্মিকে মুক্তি দিল হামাস : গাজায় যুদ্ধবিরতি ও বন্দিবিনিময় চুক্তির অধীনে আরও তিন জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় ১১টার পর গাজার মধ্যাঞ্চলের দেইর এল-বালাহতে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির (আইসিআরসি) কাছে তাদের হস্তান্তর করা হয়। গতকাল যে তিন জিম্মিকে হামাস মুক্তি দিলো তারা হলেন- এলি শারাবি (৫২), ওহাদ বেন আমি (৫৬), এবং ওর লেভি (৩৪)। তারা সবাই বেসামরিক ব্যক্তি। জিম্মিদের মুক্তির সময় সেখানে কয়েক ডজন ভারি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত ফিলিস্তিনি যোদ্ধা এবং বেসামরিক নাগরিকদের দেখা যায়। সূত্র : রয়টার্স, তাস, আল-জাজিরা।


বিভাগ : আন্তর্জাতিক


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

ভারতে হোলির আগে ঢেকে দেওয়া হয়েছে ১০ মসজিদ
রক্তবৃষ্টিতে
পুনর্মিলন স্থগিত
পুরস্কার প্রত্যাখ্যান
বলিভিয়ায় নিহত ১৩
আরও
X

আরও পড়ুন

রাঙা সকালে শাবনাজের না বলা কথা

রাঙা সকালে শাবনাজের না বলা কথা

জে-হোপের সুইট ড্রিমস

জে-হোপের সুইট ড্রিমস

ঈদে চ্যানেল অইতে ৭ সিনেমার ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার

ঈদে চ্যানেল অইতে ৭ সিনেমার ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার

বিশাল আয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রে জেমসের কনসার্ট

বিশাল আয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রে জেমসের কনসার্ট

অ্যাভাটারের তৃতীয় পর্ব মুক্তি পাবে ১৯ ডিসেম্বর

অ্যাভাটারের তৃতীয় পর্ব মুক্তি পাবে ১৯ ডিসেম্বর

মাইকেল চাকমাকে পাসপোর্ট দিতে রুল

মাইকেল চাকমাকে পাসপোর্ট দিতে রুল

কেউ কেউ কৃত্রিমভাবে বিরোধ তৈরির চেষ্টা করছে : মির্জা আব্বাস

কেউ কেউ কৃত্রিমভাবে বিরোধ তৈরির চেষ্টা করছে : মির্জা আব্বাস

জুলাই-আগস্টে ঢাবি ক্যাম্পাসে সহিংস ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন ভিসির কাছে হস্তান্তর

জুলাই-আগস্টে ঢাবি ক্যাম্পাসে সহিংস ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন ভিসির কাছে হস্তান্তর

বৈষম্যমুক্ত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় তাক্বওয়ার শিক্ষা নিয়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে Ñজমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ

বৈষম্যমুক্ত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় তাক্বওয়ার শিক্ষা নিয়ে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে Ñজমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ

শিক্ষার্থী ধর্ষণ মামলায় খালাস পেলেন উপসচিব রেজাউল করিম

শিক্ষার্থী ধর্ষণ মামলায় খালাস পেলেন উপসচিব রেজাউল করিম

চার্চের শিক্ষক সুব্রত বৈদ্য হত্যায় সব আসামি খালাস

চার্চের শিক্ষক সুব্রত বৈদ্য হত্যায় সব আসামি খালাস

জাতীয় পরিচয়পত্র নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখতে নরসিংদীতে কর্মবিরতি

জাতীয় পরিচয়পত্র নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখতে নরসিংদীতে কর্মবিরতি

আছিয়ার মৃত্যু দেশ ও জাতির জন্য লজ্জাজনক : ইউট্যাব

আছিয়ার মৃত্যু দেশ ও জাতির জন্য লজ্জাজনক : ইউট্যাব

সংস্কার সুপারিশ নিয়ে মতামত দিয়েছে ৭ দল, ১৬ দল সময় চেয়েছে

সংস্কার সুপারিশ নিয়ে মতামত দিয়েছে ৭ দল, ১৬ দল সময় চেয়েছে

ঢাকা সংবাদপত্র হকার্স সুপারভাইজার সমিতি গঠিত

ঢাকা সংবাদপত্র হকার্স সুপারভাইজার সমিতি গঠিত

রামপালে অবাধে চলছে ঘের দখল ও চাঁদাবাজি

রামপালে অবাধে চলছে ঘের দখল ও চাঁদাবাজি

মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের আয়োজনে দোয়া ও ইফতার

মৌলভীবাজার প্রেসক্লাবের আয়োজনে দোয়া ও ইফতার

সুন্দরবনের কাঠসহ ১০ চোরাকারবারী আটক

সুন্দরবনের কাঠসহ ১০ চোরাকারবারী আটক

কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজকে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করার দাবিতে মানববন্ধন

কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজকে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করার দাবিতে মানববন্ধন

নোবিপ্রবিতে ৮০০ কেভিএ বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন উদ্বোধন

নোবিপ্রবিতে ৮০০ কেভিএ বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন উদ্বোধন